দেশ ভাবনা ৪ঃ আগামী নির্বাচিত সরকারের কাছে আমার প্রত্যাশা

দেশ ভাবনা ৪ঃ আগামী নির্বাচিত সরকারের কাছে আমার প্রত্যাশা

বাংলাদেশ আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের উন্নয়ন যাত্রা অনেক দূর এগিয়েছে, তবে সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত। এই প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচিত সরকারের কাছে আমার কিছু ব্যক্তিগত প্রত্যাশা রয়েছে—যা আমি মনে করি একটি কার্যকর, দূরদর্শী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হওয়া উচিত।

অর্থনীতি ও বৈদেশিক আয়ের ক্ষেত্রে:

রপ্তানি বৃদ্ধির টার্গেট: ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি মাসে অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনে নতুন নতুন খাতকে উৎসাহ দেওয়া ও বাজার বৈচিত্র্য আনতে হবে।

রেমিট্যান্স প্রবাহ: প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে প্রবাসী কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন ও নিরাপদ অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ: ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ গঠন করতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে।

প্রকৃত মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি: মাথাপিছু প্রকৃত আয় ৩০০০ ডলার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে শিল্প, প্রযুক্তি এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দিতে হবে।

গার্মেন্টস নির্ভরতা হ্রাস: টোটাল এক্সপোর্টে গার্মেন্টসের অবদান ৮৫% থেকে ৬০-৬৫% এ নামিয়ে আনা জরুরি, যাতে অর্থনীতির ভিত্তি আরও বহুমাত্রিক হয়।

আইন ও স্বাস্থ্যখাতে কাঠামোগত উন্নয়ন:

বিভাগীয় শহরগুলোতে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন করে বিচারপ্রাপ্তির সমতা নিশ্চিত করা দরকার।

✅ প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে স্পেশালাইজড হাসপাতাল গড়ে তোলা স্বাস্থ্যসেবায় কাঠামোগত উন্নয়নের একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অবকাঠামো:

D-8 ভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে FTA এবং ৩০ দিনের অন-অ্যারাইভাল ভিসা চালুর মাধ্যমে বাণিজ্য ও পর্যটনের নতুন দিগন্ত খুলে দেওয়া সম্ভব।

✅ ২০৩০ সালের মধ্যে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, মিরসরাইয়ের জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা উচিত।

বাজেট ও ব্যয়ের অগ্রাধিকার পুনর্বিন্যাস:

✅ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ জিডিপির ২% থেকে ৪%
✅ স্বাস্থ্যে বরাদ্দ জিডিপির ১% থেকে ৩%
✅ সামরিক খাতে বরাদ্দ জিডিপির ১.৫% থেকে ২%
✅ সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির ২.৫% থেকে কমিয়ে ১%


স্পেশাল মেনশন: ২০৩৫ সালের চ্যালেঞ্জ

আগামী নির্বাচিত সরকারকে শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জের জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। বিশেষ করে নিচের বিষয়গুলো নিয়ে এখনই কাজ শুরু করা জরুরি—

  • AI, অটোমেশন ও রোবোটিক্স: এগুলোর প্রভাবে গার্মেন্টস খাত বড় ধরনের ধাক্কা খেতে পারে।
  • মধ্যপ্রাচ্যের মেগা প্রজেক্ট শেষ হওয়া: কর্মসংস্থানের বড় একটি উৎস কমে আসবে।
  • জনসংখ্যা হ্রাসের ধারা: কর্মক্ষম তরুণদের তুলনায় বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন।

উপসংহার

আমার এই প্রত্যাশাগুলো কোনো স্বপ্ন নয়—এগুলো বাস্তবসম্মত, পরিকল্পনাভিত্তিক এবং আগামী প্রজন্মের জন্য টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে সহায়ক হতে পারে। আগামী সরকার যদি এই বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে, তবে বাংলাদেশ একটি ন্যায্য, উদ্ভাবনী ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বদরবারে নিজেকে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।

দেশ ভাবনায় সকলের অংশগ্রহণ হোক—এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *