দেশ ভাবনা ১: সংসদ ও নির্বাচন ব্যবস্থা কেমন হতে পারে
সূচনাঃ
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও নির্বাচনী ব্যবস্থায় কিছু সমস্যার কারণে কার্যকর নেতৃত্ব এবং সঠিক নীতিনির্ধারণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, ভবিষ্যতের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ, স্বচ্ছ এবং দক্ষ সংসদ ও নির্বাচন ব্যবস্থা তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের উন্নতি এবং গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে, সংসদকে ২ কক্ষ বিশিষ্ট করার প্রস্তাব নতুন আলোচনার সূচনা করতে পারে। এই প্রস্তাবিত ব্যবস্থা কীভাবে বর্তমানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে এবং জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
প্রস্তাবসমূহঃ
– সংসদ ২ কক্ষ বিশিষ্ট হবে: নিম্নকক্ষ (House of Assembly) এবং উচ্চকক্ষ (Senate)
– নিম্নকক্ষ ৩০০ সদস্যবিশিষ্ট হবে, যারা বর্তমান পদ্ধতিতে ৩০০ আসনে জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হবে উইনার টেকস অল ফরমেটে। ২৫-৬৫ বছরের মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের নির্বাচন করার পার্মিশন থাকবে। মিনিমাম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। কেউ ৩ বারের বেশি নিম্নকক্ষর সদস্য হতে পারবেন না এবং ৫ বারের বেশি নির্বাচন করতে পারবেন না। এক ব্যাক্তি একাধিক আসন থেকে নির্বাচন করতে পারবেন না।
– নিম্নকক্ষর বিজয়ী দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী এবং সরকার প্রধান হবেন। ২ বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী হতে পারবেন না। সরকারের মেয়াদ হবে ৬ বছর।
– উচ্চকক্ষ ১০০ সদস্যবিশিস্ট হবে, যারা নিম্নকক্ষ নির্বাচনে পাওয়া ভোটের পার্সেন্টেজের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন (৭৫) এবং প্রেসিডেন্ট এর মনোনয়ন (২৫) থেকে আসবে। এর ফলে প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আসবে। উচ্চকক্ষে বিভিন্ন সাব্জেক্ট ম্যাটার এক্সপার্ট রাখা হবে, যারা বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন। বয়স মিনিমাম ৪০ হতে হবে এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা অন্তত মাস্টার্স পাস হতে হবে। দ্বৈত নাগরিকদেরকেও এখানে রাখা যাবে।
– যেকোনো আইন বা প্রস্তাব পাস করতে গেলে নিম্নকক্ষ তে ২০০ ভোট এবং উচ্চকক্ষে ৫১ ভোট পেতে হবে। উভয় কক্ষের সব সদস্যর স্বাধীনভাবে যেকোনো প্রস্তাব বা আইনে ভোট দেয়ার অধিকার থাকবে।
– বর্তমান সংরক্ষিত নারী আসন তুলে দিতে হবে। উচ্চকক্ষে ২৫% নারী আসন, ১০% সংখ্যালঘু ধর্ম ও জাতির, এবং ৫% প্রতিবন্ধী প্রতিনিধি নিশ্চিত করতে হবে।
– ৬ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ২০ সদস্যর কেয়ারটেকার সরকার ৬ মাসের জন্য দায়িত্ব নিবে। কেয়ারটেকার সরকারের বাকী ১৯ সদস্যদের নাম আসবে সদ্যবিলুপ্ত উচ্চকক্ষের সদস্যদের দ্বারা গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে।
পরিসংহারঃ
একটি কার্যকর সংসদ ও নির্বাচন ব্যবস্থা কেবল দেশকে সুশাসনের পথে নিয়ে যাবে না, বরং মানুষের আস্থা অর্জন করে গণতন্ত্রকে আরও দৃঢ় করবে। প্রস্তাবিত দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং নতুন নির্বাচন প্রক্রিয়া দেশের ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে, বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা নিশ্চিত করতে এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকে সুরক্ষিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে উন্নত, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতামূলক প্রশাসনের দিকে এগিয়ে নিতে আমাদের এ ধরনের নতুন ব্যবস্থার চিন্তা করা এখন সময়ের দাবি।