দেশ ভাবনা ৩: ট্রাফিক জ্যাম কমানোর ১০টি কার্যকরী পদক্ষেপ
ঢাকা শহরের যানজট সমস্যা আমাদের সবারই নিত্যদিনের ভোগান্তির কারণ। সময় নষ্টের পাশাপাশি এটি অর্থনৈতিক ক্ষতিরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ট্রাফিক জ্যাম কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ দেওয়া হলো:
১. ট্রাফিক সিগনালের অটোমেশন
সকল ট্রাফিক সিগনালকে স্বয়ংক্রিয় করতে হবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ব্যবহারের মাধ্যমে কোন রাস্তায় চাপ বেশি, কোন দিকে চাপ কম তা শনাক্ত করে অটোমেটেড সিগনাল ডিজাইন করতে হবে। এতে যানবাহনের চলাচল আরও দক্ষতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত হবে।
২. ভিন্ন সাপ্তাহিক ছুটি
ট্রাফিক চাপ কমাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সাপ্তাহিক ছুটি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার করা যেতে পারে, আর অফিস, ব্যাংক ও আদালতের সাপ্তাহিক ছুটি রাখা যেতে পারে শুক্রবার ও শনিবার। এতে বিভিন্ন সময় সড়কে যানবাহনের চাপ কমবে।
৩. আন্তজেলা বাস টার্মিনাল শহরের বাইরে স্থানান্তর
সকল আন্তজেলা বাস টার্মিনাল মূল শহরের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। এতে শহরের কেন্দ্রস্থলে বাসের জট কমে যাবে এবং শহরে প্রবেশ ও বের হওয়ার গতি ত্বরান্বিত হবে।
৪. ট্রাক ও বড় বাসের নিয়ন্ত্রিত প্রবেশ
রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাক এবং বড় বাস ঢাকার ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। এতে দিনের ব্যস্ত সময়ে সড়কের যানজট কমে যাবে।
৫. ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নিয়োগ
হিজড়া কমিউনিটিকে ট্রাফিক সিগনালের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পেইড স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে, যা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে।
৬. রাস্তার মোড়ে ডান দিকে যাওয়ার নিয়ম পরিবর্তন
সকল চার রাস্তার মোড়ে ডান দিকে মোড় নেওয়া নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। ডান দিকে যেতে ইচ্ছুক গাড়িগুলোকে ৫০ মিটার সামনে থেকে ইউ-টার্ন নেওয়ার নিয়ম চালু করতে হবে।
৭. অবৈধ পার্কিং ও হকার নিয়ন্ত্রণ
সকল ৩/৪ রাস্তার মোড়ের ৫০ মিটারের মধ্যে হকার বসা এবং পার্কিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। এতে যানবাহনের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে না।
৮. মূল রাস্তায় রিকশা চলাচল নিষিদ্ধকরণ
মহামারির আগে যে নিয়ম চালু ছিল, সেই অনুযায়ী প্রধান সড়কগুলোতে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা উচিত। এতে দ্রুতগামী যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে।
৯. বাস কোম্পানির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ
ঢাকার সব বাস রুট ১০-১৫টি নির্দিষ্ট কোম্পানির আওতায় আনতে হবে। নির্ধারিত বাস স্ট্যান্ড ছাড়া কোথাও বাস দাঁড়াতে পারবে না। বাস চালকদের প্রশিক্ষণ এবং লাইসেন্স ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কোম্পানির উপর ন্যস্ত করতে হবে।
১০. বিকল্প বাইপাস ও বিকেন্দ্রীকরণ
ঢাকার বাইপাস সড়কগুলোর প্রশস্ততা বাড়িয়ে অন্তত ৪ লেনে উন্নীত করতে হবে (যেমন: গাবতলী – বসিলা- সোয়ারিঘাট- বাবুবাজার)। পাশাপাশি ঢাকার বাইরে অন্তত ১০টি জেলায় শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে মানুষ ঢাকামুখী না হয়ে নিজ নিজ এলাকায় কাজ করতে পারে।
উপসংহার
যানজট একটি বহুমাত্রিক সমস্যা। এটি সমাধানের জন্য কেবলমাত্র এক বা দুইটি পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। উপরোক্ত সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হলে যানজট অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। আমাদের এখনই প্রয়োজন কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন।